Thursday, January 28, 2010

মনবাড়ি

বিকেলটা একাকী হলে কেনো জানি প্রেরণামাখা চাপা ক্রোধগুলো অদৃশ্য বিশ্বাস জপে দেবদারুর ধিক্কার সহে বনপথে হাঁটে, পাতা ছিঁড়ে! কীভাবে বুঝাই বলো? পিপাসা এতো অধিক প্রিয় ছিল যে, কিছুটা দূরত্ব মাপা শেষে তার চোখের ভেতর ঢুকে পড়ে ভ্রমণস্পৃহা... আফালি হাওয়ার দেশে যাব বলে যে রহস্যগল্প এতো-এতো ভয়ের ভেতর জাগিয়ে তুলছে অভিজ্ঞতা, কী করে বলি তুমি আহত রক্তজবা। কাঁটাদাগসহ দূরত্ব মাপি- চোখ টেনে, বুক টেনে, মনবাড়ি ফিরি তার চাপা ক্রোধ মেখে...

কিছু থেকে গেলো জানার, আমাকেও থামাতে হচ্ছে অধিকার
চোখ টেনে, বুক টেনে, মনবাড়ি কি ফেরা হবে না তোমার?

অন্ধঘড়ি

গতি টেনে পাশাপাশি বসে গেলাম, হউক না সেও দীর্ঘ অবসর; অন্ধঘড়ির কাঁটার মতো ঘুরে ফিরে আসুক; রাত্রি গুনতে শিখুক মৃতসময়। জলঠোঁটে জমা পড়–ক ঘুমবালিশের পাঠ, আর অন্ধঘড়ির ভেতর আসা-যাওয়া ভলো। তবুও তুমি আঘাত করো রতিগন্ধা শাদা তীর; কেনো যে স্মরণ রাখি মনের ফিকির। এই শীতে কোথাও যাব না জেনে, আশা বালিকাটি কুয়াশামাখা রোদে মাপজোক নিচ্ছে ঘনত্বে; অথচ শীতরাত্রিরাও আমাকে জাগিয়ে রাখছে ঘুমপাহাড়ের দেশে...


গতি টেনে পাশাপাশি বসে গেলাম, আকাশ-বৃষ্টি-রজঃস্বলা...
আশা বালিকাটির রহস্যকাহিনী অন্ধঘড়ির মত ঘুরছে একেলা

মনচুরি- ভয়চুরি

মৃতসঙ্গ দূরে থাকা ভালো যেহেতু মিশে আছো আমাদের মাঝখানে; চুক্তি-কানাকড়ি এবার দেখি চুম্বনেচ্ছা কী করে টের পায় মনচুরি-ভয়চুরি! টেনে রাখা দিনের দৃশ্য আর ক’দিন ভাবাবে সেকথা ভাবলেই আমার সকল বিশ্বাস আলাদা হাসে; আলাদা পায় প্রাণ, আর আমাকে ফুরফুরে রাখে পুরনো সময়। এসো মৃতসঙ্গ হাত ধরাধরি শিখি; শিখি দূরে থাকার চৌহাদ্দি... মন ফুরালে কী হয়? মনভয় কেনো এতো রহস্যের ভেতর খুঁজে অস্থিরতা, ভয়। ভয়ের কি শব্দ হয়...


মৃতসঙ্গ দূরে থাকা ভলো, আমি গুনে নেবো পুরনো সময়
মনের রহস্য তুমি স্বস্তি পরে নাও, আমি পরি তৃষ্ণার্তহৃদয়

শেষ জীবন ছায়া

নিরিবিলি কথা চুপচাপ থাকা, হাসি কান্নার ভেতর শরীরকে রাখি ঝরঝরে, তরতাজা। সে আমার তৃতীয়জীবন। দ্বিতীয়জীবন সুখে দুঃখে বেঁচে থাকা। আর প্রথমজীবনানুভূতির জায়গাটা কি হবে না তোমার ছোঁয়া? লক্ষ্য বিন্দুর দূরে থেকেও এই তিন পায়ের শেষচাপ এতো বেশি ভাবায়, আত্মগরিমায় নয়, মানসিকতা আমাকে দেখায় শেষজীবনছায়া...

শেষজীবনটাকে আমি বেছে নেব, কোন জীবন তোমার কাছে প্রিয়
নিরিবিলি কথা চুপচাপ থাকা তোমাকে কি মানায় আমার সত্তায়

বৃষ্টিবন্ধু

আজ এই উৎসবের দিনে সাতসকালে পূর্বাকাশে সূর্যবন্ধুকে ডেকেছি। এসো, তোমার জলচুলে সিঁথি-সাঁতার কাটি; গেঁথে দেই একগোছা গোলাপ-চ্যামেলী-জুঁই। শুধু আজকের দিনে ‘পরান খুইল্যা কথা কও’...। আর একবার মন খুলে পাঠ করো, আমি যা ভাবি তাই যেন দীর্ঘ থেকে অতি দীর্ঘ হয়। বৃষ্টির পরানিয়া জল আজ মনে ধরছে খুব... তীব্র শীতের চাপে। এই ঊনত্রিশ যে শিকল পরতে জানে, সামাজিকতা মানে না...

অতিসহজ কথার ভেতর কাকে যেন পাঠ হল জানি না
সে কি জানে? ঊনত্রিশ কোনো সামাজিকতা মানে না

যৌথশোক

চোখের নজর ফলাও দূরে। ধরা পড়েনি তো আগে, দিনে দিনে বেড়ে ওঠে ভয়; বেঁচে যে আছি তাও ভয়ে-অভয়ে... ভিন্ন এক পথের মানুষ। দৃষ্টিমোহ যদি প্রশ্ন করো কেউ কি ঠকিয়েছে ভয়ের ভেতর? আস্থায় বলবো আমারও কি ঠকানোর ভয় ছিল কোন কালে? সহমত যেন ভরাযৌবনা আহ্বান টেমসের উথলাজল... আড়ালে খুলে রাখা এ-মধুবেদনা... যৌথ মনের শোক। বলি যৌথশোক, সব কথার ভেতর সম্মতি চাওয়া কী করে মানায়...


বলার অনেক, বলতে পারিনি কিছুই , থাক্ না মনে
সে ক্ষমতা দেয়নি যৌথশোক জমাতে পারিনি কলমে

মনচরাচর

তিনদিনের বেশি রাগ ধরে রাখতে পারি না বলে মন তুমি স্বস্তিতে থাকো, তবে কেনো গোপনে এতো দুঃখ পাওয়া! ‘আমাদের আবশ্যক সুখ’ একবার জানতে দাও। দিনের পর দিন কীভাবে বশে রাখো এতো বেশি রাগ! না-কি আমার ধারণাটুকু মিথ্যা ফলাবে আজ। সময় কিন্তু ফুরায় না আমার, কষ্ট হয়, দুঃখ হয়, মন খারাপ থাকে বন্ধুর সাথে সম্পর্ক হারানোর ভয়ে...

চাই তার বন্ধুর সাথে যোগাযোগ হউক আরো নিবিড়
আমি তাঁর কণ্ঠের ভেতর মনচরাচর, হারাই অষ্টপ্রহর

চার দেয়ালর গান

মানুষ যা ভাবে, সে কি ভাবনার পুরোটা বলে... সে কথাটি ভেবে আজই প্রথম চোখ ঘুরিয়ে চারদেয়ালকে দেখলাম একসাথে। আর তাদের বললাম আমাকে ডাক দিলেই পেয়ে যেতে পারো তোমাদের গোপন আড্ডায়। হউক না সে আড্ডা আয়োজনহীন। যতই হউক না অপেক্ষার পালা নিরুত্তাপ ফুলের ঘ্রাণ। আমরা বসে থাকলেই দেখবে আমাদের কথার ভেতর উড়ে যাচ্ছে একরাশ শাদাকালোমেঘ। পরিপাটি যত জমানো আবেগ...

মানুষ যা ভাবে, প্রথম ভাবনাটি মৃত্যুই হবে হয়ত
আমার চারদেয়াল কালো হউক তোর হৃদয় সহিত

বিশ্বাস চিরকাল বাঁচে না

সেদিন আমার সব চিন্তা মিশে গিয়েছিল সাবলীল ঘুমে, আর ঘুমের ভেতর শোনা হল কথা! যে ভুল ওষ্ঠ ছোঁয়ালো যৌবনের প্রথম প্রহর গুনে; বহুদিন পর সে ভুল কি পাশাপাশি নামতে দেখেছো হারানো দূরত্বে; বলেছি তাকে বিশ্বাসে...। ইচ্ছা হত্যার ভেতর ঘুম ভেঙে গেলো; ভ্রম-বিছানা শোয়ে-শোয়ে ভাবছে এ-ও তো ঠিক যে বেঁচে থাকতে হলে কাউকে না-কাউকে বিশ্বাসবলয়ে জড়াতেই হয়। কেনো এ বিশ্বাস জন্মেছিল সংশয়ের বুকে, সে প্রশ্নোত্তর খুঁজে ফিরি আজও...

বিশ্বাস চিরকাল বাঁচে না; হিংসা খুঁড়ে তুলে আরো যত কথা
বিশ্বাসের দ্যুতি সর্বত্র ফুটলেই, আমাদের বিশ্বাসে জমবে ব্যথা

বৃষ্টি ভনিতা

বাসস্টপে বসে থাকার মানে মুঠোফোনে সময় গুনা নয়। সুযোগ পেলে তাকে মনে রেখে পাঠ করে যাই দু’চারটি কবিতা; পোশাকের ভেতর মন হাসে, হু-হু ঠাণ্ডায় জমে ফেরার তাড়া। বসে থাকার মানেই তো কঠিন অপেক্ষা... সে আমার অতীত বেলার কথা। কি যেন মিস্ করে এলাম; কি যেন চাওয়ার ছিল ভীষণ বেহায়া। এসব বলতে মানা; তারপর ভিন্নকথা। রাত পেরুলেই আবার রুটিন মেনে কাজে যাওয়া... নাহ এই সব আমাকে দিয়ে হবে না...

অন্যকথা বলো- আমিও শুদ্ধ হবো, হৃদয়পাড়ায়
চাওয়া তো ভীষণ বেহায়া-ই হবে বৃষ্টি-ভণিতায়

এক টুকরো-মোম

আমার ভয় স্ট্রবেরি ছায়ায় লুকাতে পারে না বলেই পথে বে-পথে ঘুরেও যথেষ্ট ক্ষমতাবান হয়! গুপ্তসূত্র মেনে আমাকে গ্রহণ করতে চায় স্ট্রবেরিহৃদয়; কিছু ছল কিছু লোভ ছিল ঘোষপাড়ায়... সময় আমাকে ধার নিয়ে চলে- পুরো অধিগ্রহণ যাকে বুঝায়। ভয়, আজ তবে চলো- একসাথে গভীরে যাই জ্বলন্ত মোমের ফোটায়...

ভয় বেশ নিরুদ্-বেগ; লাবণ্য খুঁড়লেই ঘ্রাণ স্ট্রবরি ভাঁজে
আমাকে গ্রহণ করো স্ট্রবরিহৃদয়; যে ঋণ দীর্ঘদিন তাতাবে

এসো তবে নেমে যাই শ্রাবণে, জলপতি ডালে

আমার ক্লান্তিরা ঝরে গেলেই মুক্তি পাবো কি-না কে জানে? পালাবদল যদি হয় তো হউক; একটু একটু করে নেমে পড়–ক পুরনো বাঞ্ছায়; না-হলে কি-বা ক্ষতি এ-রাত্তির? এসো তবে নেমে যাই শ্রাবণে, জলপতি ডালে...। আমাদের পাশাপাশি খাড়া হতে শিখুক মনোযোগহীন কথাবার্তা। ক্লান্তি না-আসা নীলব্যথা যদি আমাকে তুলে নেয় কৌটায়, প্রবাহিত হয় বাঁকানো-হাওয়া। বোকাসোকা অসুখটা এমনিই সেরে যেতো, থাকতো না কুমারী আর্তনাদ...

ক্লান্তি আসা না-আসার অন্তরালে জীবন চলেছে
এসো চুপিচুপি মিশে যাই ছায়ায়, গাছের নিচে

ঘুমাও রাত্রি, ঘুমাও

একমাত্র পাখিরাই বুঝে রাতের লাগাম টেনে কখন ফোটবে ভোর। লক্ষ্য কেনো যে রাত্তিরে উত্তেজিত করো তিনদিকে ঢেকে; যে দিক খুলে রাখো শেষ রাত্রির সুন্দরী ঠাণ্ডা লেগে যায় ঘুমে, সকালে গরম এককাপ চা খেতে খেতে মনে পড়ে কেনো অজ্ঞতা ঘুমপাখি হও ঠাণ্ডা জমানো বুকে। আমার ঘুমের গতিবিধি ভালোই বুঝে শীতরাত্রি... কিছুই বলবো না; শোনো তোমার অ-দেখা সময়; আমার অন্ধঘড়িখানি...

ঘুমাও রাত্রি- আমাকে জড়িয়ে রাখছে মন-দোলানো ঘুমের গতিবিধি
অন্ধঘড়ির ভেতর বেঁচে যাই, লাগামহীন ঘুমঘোর টান দাও যদি...

বারো মাস নদী পাড়ে হাঁটি

কতকথা মনে আসে, মনে ভাসে। অনেক কথা ভুলে গেলেও চলে; যেভাবে বুকচাপা মনের শুশ্র“ষা চলে, চলে স্বতন্ত্র সমর্পন। তুমি লিখে ফেলতে পারো আমার সকল নিঃশ্বাস, পতনপ্রয়াস। ও-ভ্রমণবাতাস শোনে যাও? বন্ধুত্বে আমার কোন দংশন নেই। নেই স্মৃতিস্তব্ধতা, কিম্বা পরম্পরাহীন মায়াদর্পণ। শুধু বারোমাস নদীপাড়ে হাঁটি; কান্নানদীর সন্তরণ শেষে খুন হতে দেখি স্মৃতি আর ঈর্ষাচুরি...

মনের আশা পুনরায় জাগে বাস্তবতা ছুঁয়েছো কার অছিলায়
ও-ভ্রমণবাতাস? আমাকে কেনো যে দোলাচ্ছ ধুলোহাওয়ায়

নদী ও নারীর কাছে যাব

কোথায় যাব? শ্বাসের ভেতর কার জন্য হয় দীর্ঘ অপেক্ষা। সান্ত্বনা ভরদুপুরে এঁকে রাখে কাচের চাদর! সে কি ‘নারীরূপাকার ছায়া’ উদাস সময়! জিন্সপ্যান্ট-জুতা একটি হলেই হল; জানি না আমার চেহারার সাথে কোন কোর্তাটা মানাবে ভালো; আয়নায় দেখি না মুখ কতদিন হল! শার্ট পরা ছেড়েছি বছর দশেক হলো। এই যে বোতাম লাগানো আর খোলা ভাল্লাগে না আমার...

কোথায় যাব আজ? ভাবতে ভাবতে কোথাও যাওয়া হল না
আজ নদী ও নারীর কাছে যাবো, তাদের কাছে মিলে সান্ত্বনা

ভষ্মফুল কেঁপে উঠে ভয়ে

সকল নিয়ম আমার সাথে সর্দারি করে! তাদেরই একজন দৃষ্টি-জঙ্গলে পেল কিছুটা আদর... অ-পরিচিতজন সফল হলো পুরনো আদলে; অ-পড়শিরে ডেকে বলিল- শোনো, শুরু হলেই গো সমাপ্তির কথা আসে; সময়ফুল তাই বলে! নাকি অগোচরে খুলে দিয়েছো ভাঙন! তাবৎ বন্ধকপাট?... এই ভয়ে আমি হারাতে চাই না আর কারো চোখে চিরকাল; এ-লক্ষ্যে তার লাটিম ঘোরানো চোখটা দেখলেই ভষ্মফুল কেঁপে উঠে ভয়ে...

একা থাকলেই কি হতে হয় কারো মোহে বিলীন
ভায়োলিন না-বাজালেও চলে বাজাও মাউথঅর্গান

নিদ্রা মণি

হাওয়াফুল আর আমি হাঁটছি কাছাকাছি। আরেকটু এগুলেই অন্ধকার! এই অন্ধকার আমার একার হলেই ভালা হতো; আমার ধারণা অবসরে ফিস্ ফিস্ আকাশবাণীরাই আমার প্রিয়সহচর; কিছু বুদবুদ দেখে আমাদের প্রস্তুতি ‘বিষাদসিন্ধু’ জলকেলি... দু’চোখে এতো বিশ্বাস এতো টানাটানি; নিবিড়স্পর্শ কেড়ে কে আজ খেয়ে ফেললো তিন ফোঁটা চোখের অনুতাপ; চার ফোঁটা ক্ষয়িতজলবিষ। আহা অন্ধকার! তোমার তিলফুল সর্বাঙ্গসুন্দর...

হাওয়াফুল তুমি কি দেখেছো, অন্ধকার কতোটা ছিল ঋণী
অবজ্ঞা করো না প্রিয়সহচর, সোয়াদ জাগে কি নিদ্রামণি

কথা, হৃদয় সংহিতা

হৃদয়সংহিতা, তুমি বলতেই পারো করাতকথা! সে কিনা আজ ধারে ভারে দু-দিকেই কাটে। করাতের ধার ছুঁতে আমিও হই কাঙালপনা। ওই করাত স্পর্শ তুমি ঠোঁটে পরো। অনুভব করো। জানিবার চাও। কতটুকু গভীরে পৌঁছালে পাবে স্পর্শ অধিকার। পাবে নিশানা সহজ হবার...

করাতকথা! পাঠ ভালোই জানে জল, বরফ আর কাঠ
তুমি কাঁদলেই দেখি আমার চোখে দাঁড়িয়েছে বৃষ্টি-টাট

তোমার সরলতা গ্রহণে

সাহস দাও বলেই তাই পাশাপাশি বসি, সুযোগ পেলে বলি দু’একটি কথা। মনে জাগে অভিলাস, জানার শেষ অপেক্ষার বিষগুলো ঠোঁট ঘুলিয়ে দাঁতের ফাঁক ফোকরে ফেটে পড়ছে দেখে তুমিও পান করাও হাওয়াভরা দু-চোখের ইশারা। এটুকুই জানি তবুও মনে হয় নিরুপায়। সাহসের উপর ভর রেখে ইদানিং একটু অগোচরে কাটছে সময়... ‘শুরু থেকে যদি’...

সাহস ক্ষণে-ক্ষণে খুঁজে নতুনত্ব, আর কাকে খুঁজে কে জানে
বিষদাঁতগুলো আজও ঠোঁটে ফুটেছে তোমার সরলতা গ্রহণে

আশা-কাঙ্ক্ষা-যৌবন-আকর্ষণ

আশা ছিল, কঠিন পাথরের মতো এলোমেলো। ভাবতাম হয়ত-বা আমিও মনের জোরে হবো নির্ঝরস্নান; স্বপ্নাপ্লুত হাওয়ার ভেতর ‘অন্য কারো মন’ জড়িয়ে পেঁচিয়ে রাখছি রক্তমাংসের প্রত্যেকটি ক্রুদ্ধশাসন। ছুঁব ছুঁব করে আর ছুঁয়া হল না বোধি-স্বপ্নকথা...। আবেশি, কী করে যে বলি- কেনো মুখ ফিরিয়ে নাও বিষের বাঁশী; সেকথা ভাবলেই আমার গণ্ডেপিণ্ডে লেগে থাকে পাতাবাতাসের গান...

অন্ধআবেগ বিছিয়ে রাখছি। পর্দা সরাও, দেখে নাও পুরনো স্বজন
বদলাচ্ছে তোমার সকল আশা-কাঙক্ষা-আকর্ষণ... আহারে যৌবন!

ঘাম ফুলের গতি বেগ

তোমাকে দেখা আর সম্যক উপলব্ধি করা- দুটি আজো অধরা। লুকিয়ে রাখছো কি ভয়, পুরো লোক-লজ্জা। সে প্রশ্ন রেখে গেল কারা? এ সব কথা কীভাবে বলি! আমি যে মজিয়াছি তাঁর একপলক ইজাজতের আশায়। কাজ শেষে পলকহীন শ্বাস টেনে বাড়ি ফেরা মানেই ক্লান্তভার ঠেলে ঘামফুলের গতিবেগ আগলে রাখা। একাকী বসতি তাই মনের উপর জাবর কাটছে শ্রীনগর, খননপিপাসা; ইচ্ছেকথা তুমিও বুঝে নাও ক্লান্তিহীন আমি এককাপ চা...


অসম-মন-ঘড়ি, আমাকে সম্যক উপলব্ধি করো না আর
ক্লান্তদেহ মানছে না আর, মুক্তি দাও... মুক্তি দাও এবার

শেষ পরাজয়ে আমিও একেলা

সন্ধ্যা ঘনালে আমার সকল পথ সহজে বাঁক নিতে চায়, দেহগাছের মহিমায়। যেন মড়ক ধরেছে মিথাইলের ঝাঁকসহ গ্রহণের ভাজে। রসায়নপাঠ কি আর কবিতা বুঝে? কবিতারা বুঝে কি অণু ভাঙলে কেনো অসংখ্য পরমাণু মিলে! এইসব বেহুদা কথা। বাস্তবতা মানে প্রাণবায়ুর ভেতর শাসিয়ে নেয়া; নৈকট্য শৃঙ্খলা! মড়কে জিইয়ে রাখা বর্ণমালা আর বাক্যকৌশল যত ঠকিয়েছে ... শেষ পরাজয়ে আমিও একেলা...

সন্ধেভাষা কি মন বুঝে, ক্ষণ বুঝে, বুঝে কি রাত্রিবেলা
ও-বর্ণ, ও-বাক্য, ও... তাকাও আমি আর নই একেলা

তোমাদের পায়ে রোদের নূপুর ঝরে

ঘুম জাগলেই পর্দায় জানালা ঠেলে দৃষ্টি বাহিরে তাকায়; সারাদিনের রূপবর্ণগন্ধ জোড়াচোখ চাখে। আজ ভরা-রোদের, কিম্বা রোদভরা সকাল হবেই তো আলাদা অন্য সকালের চেয়ে। ঠিক দুপুরক্ষণ কাজে কাটে, আমার পায়ে কি বাজবে দুপুর; রোদের নূপুর। রোদের হাত-পা ধরে উল্টাতে-পাল্টাতে গিয়ে দেখি রোদের তীব্রতা ছায়া হয়ে লাফিয়ে উঠছে ফতুয়ায়, নীল বোতামে...

আমার হাতে দিনের শব্দ জমানো, তোমার পায়ে রোদের নূপুর ঝরে
পৃথিবীর পথে যেভাবে রোদ হাঁটে, ছায়া হাঁটে চলো তারই হাত ধরে

ভুল টার্মের হাত ধরে আসা ধারাবাহিকতা

যদি শরীর থেকে আলাদা করা যেত ঘুম; আলোর ভেতর থাকা যেত বেশ; তুমি বলতে থ্যাংক’য়ু। বলতাম বেশ তো আছি শোনে যাও, দেখে যাও পরমায়ু। ঘুমের আমেজ কখনো জ্বালায়, কখনো পোড়ায়। তবুও ভালো আজ সে হারালো দূর কুয়াশায়। ভাবতে পারো তুমি এ-জীবন! পুরোটাই ভুল টার্মের হাত ধরে আসা ধারাবাহিকতা...

একটাই জীবন, তা কি ছায়ার ভেতর বেঁধে রাখা খুব কঠিন?
জীবনবাবুর মতো আমারও কাঙ্ক্ষাফুল ‘নাটোরের বনলতা সেন’

বাইসাইকেল বন্ধুর কথা

বাইসাইকেল প্রীতি আমার বন্ধু-প্ররোচনা খুশিতে দাঁড়ায়। উৎফুল্ল আমাকে মাঠে নিয়ে যায়। কোলে পিঠে রাখে, সোহাগে আদরে ভরে তোলে সারাটা দুপুর। আদর আর সোহাগের তীব্রতায় দুজন ছিটকে পড়লাম মাটিতে। বাইসাইকেল বন্ধুটির কিচ্ছু হয়নি, আমার হাঁটু কেটেছে পচা শামুকে। বাড়ি ফিরে মাকে বলিনি বাবার ভয়ে...

আজ হাঁটুর কাটা দেখে মনে পড়ছে বাইসাইকেল বন্ধুর কথা
যদি ফিরে পেতাম শৈশব! হেসে-খেলে শেষ হত জীবনব্যথা

আঘাত

নাহ্ চোখের ভেতর আর বিশ্বস্ত থাকা গেলো না! তবুও বন্ধচোখে আস্থা খুঁজি, খুঁজি সংশয়। হঠাৎ ছুটে আসা কান্নারা সতর্কভাব নিয়ে আশা জাগায়। বললাম- ধার দাও, যতটুকু চাও, ভালো থাকা আমার। না-হলে যত্নে-প্রযত্বে কান্নাদের প্রাণ ফোটাও। তোমার নাম ধরে বাঁচি! তুমি জলফুল কি-না কে জানে...

না-বললেই কি দূরে ঠেলে রাখা যায় দ্বিধা; দেয়ালঘেঁষা বইপত্তর
পাশে দাঁড়ানোর নারী ইচ্ছায় জাগে কি জাগে না ভালোবাসাটাসা

Wednesday, January 27, 2010

সময় ফেরানোর চেষ্টায়

অপেক্ষা আর সময়ের সংঘর্ষ... সে-তো বারোমাসি ফল। অপেক্ষা-অনিশ্চয়তা শুধুই আমার। অপেক্ষা অধিক নীলাক্রান্ত হতে দেখে মনে হল সবইতো আমাদের; সময়েরই প্রেম। সময়ের ফাঁদে পড়ে রাধামন উচাটন... প্রিয়পরাজয় তাকেও ছুটি দিয়েছি অনিচ্ছাভ্রমে আগতযৌবনে; ভালোই আছে সে অনাথ মন...

তুমি অপেক্ষা করো, আমি চেষ্টায় আছি দেখি ফিরেনি সময়
মন তুমি কেনো চাও না, ফিরে আসুক আবার প্রিয়পরাজয়

এই যে দিলাম টিপ রিমোট কন্ট্রোল

বাল্বের পাওয়ারটা শূন্যের ঘরে রেখে যখন ঘুমোতে যাই রিমোটকন্ট্রোলহীনভাবে স্মৃতিরা অন্ হয়ে যায়, মনে হয় বুকের ভেতর জ্বলছে ‘হাজার ভোল্টের তার’... চন্দ্রিমারাতে আমার ছায়া আমাকে নিয়ে চলে, আমি একা-একা হারাতে চাই ছায়াহীন রাতে...। শোকোচ্ছ্বাসের ভেতর যে কান্না জমে, আমি তাদের ভালোবাসায় বশ করি, বসাই কোলে-কাঁখে। স্ববেশে আসা যত কথা... দীর্ঘশ্বাসেরও একটি ঘ্রাণ থাকে...

দীর্ঘশ্বাসের ঘ্রাণ আর ঘরভর্তি অন্ধকার না-হলে ঘুমোতে পারি না
এই, এই যে টিপ দিলাম রিমোটকন্ট্রোল। বন্ধ হও, বন্ধ হও কান্না

গালভরা হাসির টোল

সারাদিন অনেক কথা বলি- আমার শ্বেতাঙ্গিনী বন্ধুটির কান শোনে, চোখ দেখে, টের পায় নাক, জিহ্বায় স্বাদ নিতে-নিতে বোবামুখ সবই সহ্য করে ঠোঁটে। তাঁকে শিখাইনি আমি মন পিষে নেয়ার কলাকৌশল। ইচ্ছে করে আমিই মন পোষে অনন্তকাল কৃষ্ণ হয়ে বাঁচি শ্বেতাঙ্গিনী রাঁধার ঘোরে...

সেও রেখে-মেখে যায় তিন কিলোমিটার দূরত্ব! হয়ত আগামীর
এমন ভাবা ঠিক কিনা, কে জানে- পরিত্যক্ত অসুখ যে আমার

বাইপাস- সার্জারী

আমাকে গ্রহণ করো স্বেচ্ছায় কারণ কালো চশমাটা খুঁজে পাচ্ছি না আজ, তাকে পেলেই সকল আয়োজন। হতো আমাদের কান্নারও ভোজ। কিছুই হল না আজ! কিছুই হল না কাজের কাজ... তবুও জানি কান্নাকাটি করাই মনের কারুকাজ! পাখি কি কান্নার ভাষা বুঝে? কেনো যে অন্ধকার রাত্রি আমার নিয়ে ঘুমোতে চায় না; খোলা জানালার ফাঁকে ফাঁকে ঢলে পড়ে সিম্ফনি; কি যে করি... অন্ধকার-সিম্ফনি- যদি পারো করে নাও মনের বাইপাস-সার্জারী...

কখনোই আমি কালো চশমাটা পরিনি, সকল দৃশ্য যেন প্রাণহীন লাগে
হয়ত আমাকে পরে নেবে অন্ধকার-সিম্ফনি, প্রস্তুতি তাই পর্বটা আগে

পাথর ভোলানো মন

হৃদয়ের সাথে পাথরের মিল দেখে, নিজেই হয়ে গেলাম এক কঠিন পাথর। বন্ধুগণ, পাথর কি বুঝে মন, পাথরের সাথে কি মন খুলে বলা যায় কথা? ... তোমরাই সিদ্ধান্ত নাও। আমার সঙ্গ করো ত্যাগ... অনেক কথা বলে ফেলা মনের স্বভাব, অনেক কথা ভুলেও যাই সহসা। এই যৌথমন, ছায়াও পুরাতন তবু আমার পরিচয় করছে বহন। মনে না-থাকা স্বভাব; যদি পারো দয়া করে যাও একবার...

না-বলার স্বভাবে হৃদয়ের সাথে পাথর-সম্পর্ক বড়ই মধুময়
কিছু আশা তার সমীপে পাঠাবো বলে লিখে রাখি হৃদপর্চায়

শরীরের তিন-ভাঁজে-ঘাম

দৃষ্টিভঙি বদলাতে চাও ক্ষণে ক্ষণে... নিতান্ত এই যে আমি দুলছি মায়ার সুতোয়; তোমরা চোখ খুললেই পরে নিতে পারি সকল কামনারশ্মি... আমার সহায়ক কারা? কার সাথে এতো এতো মিশে থাকা-থাকি! এতো দিন তার সাথে থেকে কিছুই হলো না আমার। মন খারাপে দেহ রোগাসোগা; যারা আমার মতো মন খারাপের রোগে ভুগিতেছে, তারা আমার সাথে করবে না আপস, যতই ঢলতে চাও ডেটল সাবান শরীরের তিন-ভাঁজ-ঘাম...

আমার পাঠানুতাপ ডেটল সাবান, শরীরের তিন-ভাজ-ঘাম
দৃশ্যফেরা মানুষ কাঁধ ভরে হাঁটে; আমার ঘাড়ে শুধু দুর্নাম

দেহাকর্ষণের পূর্ণদুপুর আমাদের

মনের সাথে কিছু স্নেহরঙিনকথা দাঁড়িয়েছে চুপচাপ, দৃষ্টিগ্রাহ্য করো না প্রিয় অপরিচিত কথা, খুলে ধরো যত সন্দেহ, খুলে পড়–ক যত গ্লানিবোধ দেহঘেঁষা পুরো দাগ। স্নেহরঙিনকথা আমাকে খুন হতে বলো না তোমাদের লজ্জায়। ও-ডানার হাওয়া, ও-দূরের আবদার! কেনো যে আমাকে পরাও ধসে পড়া তিনখানা ভাব! কী দরকার, কেনো যে মাপতে বলো কঠিন অনুতাপ! প্রতিটি আঙুলই আমাকে শিখিয়েছে অনুভবের আলাদা ভাষা...

রঙ-বোনা; স্নেহরঙিনকথা; খুলে যাক ঘোর অন্ধকারে
মরচেপড়া সামাজিক চোখ কোনো যে হাঁটে বন-বাদাড়ে

ভাগাভাগি করে নাও মন কাহিনী

মনকাহিনী বারবার আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয়, কীভাবে ইশারাকথা বুঝে নিতে হয়। আমার অক্ষমতা করুণাশ্রয়ে যতোবার পেতেছে হাত, তিন ঘণ্টার অনুতাপ। আজ না-হয় কমিয়ে নেই। সে কথাগুলির আঘাত। ‘এগোতে-পেছোতে’ গেলে দেখি মাটির ঘ্রাণে মিশে থাকে গুঁড়ো গুঁড়ো জলের দাগ! মনে পড়ে যায় খাবার টেবিলে, ঘ্রাণ ওঠা ভাতে... সাজানো বিষের থালায়...

ইশারাকথা মন ফিরিয়ে নিস্ না, যতক্ষণ না-মিটে জলের দাগ
আমার সাজানো কথার ভেতর তোর সর্তক চোখের অর্ধেকভাগ

কান্নাকাটি জুড়ে ছিল কার লাভস্টোরি

পথে পথে বাউরি বাতাসে চুটিয়ে বেড়ায় যে স্মৃতি এ-কার লাভস্টোরি! কেনো যে নিঃসঙ্গতা ঘুমায়নি সারারাত! জটিল জীবনকথা আর অঝোর-শ্রাবণ, তোমাকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে রাখার টান-তেষ্টা নাই বলে পৃথিবীর বেঁচে থাকা ঠিক কি-না কে জানে? আমার সকল আয়োজন অল্পকালেই বেঁচে ছিল কারো কারো হাসিফুলের ছায়া মেখে। তোমার ছায়া ভরে আমার কাঙ্ক্ষা উড়ে যায় দূরে। যদি কখনো দাঁড়াবার সাহসও, বলো, ধন্য হবে পরানখানি...

এখনও আমি স্মৃতিভার নিয়ে মেলামেশা করি, লেখার টেবিলে
ও-হাসিফুল, তুমি ঝরে পড়ো আধো-আধো চেনা দৃশ্যে-মুকুলে

এক সাথে মিশে থাকার প্ররোচনা

ছায়ার ভেতর আজো বেঁচে আছি আমি! এ আমার একসাথে মিশে থাকার প্ররোচনা, একসাথে মিশে থাকার মানে আলো-বাতাসের শ্বাসে নিজের ভেতর নিজেকে খোঁজা...। যাপিতজীবনে ফোনালাপের ফাঁকে ভিনদেশী বলে তোমরাই করো সম্বোধন ! হাসির ছলে বলো প্রবাসী...

ক্লান্ত পা-দুটি আজো আমাকে নিয়ে চলে উজানে, পুবালি হাওয়ায়
স্বীকার করি আমিও হয়েছি ভিনদেশী বর্ষায়, অন্যচোখের আভায়

দেহ মিনার ছুঁয়ে দেখো

দেখো আমাকে ফিরাতে চাও ঘুরানো কথায়! নিলীমায় কেনো যে বাঁধো না অন্ধসময়, তবুও সুরে, বে-সুরে বাজো দেহের মায়ায়। বেঁচে থাকা মানে আশা-যাওয়া-ভালোবাসা-টাসা। ছায়ায় রোপন করা কিছু স্নিগ্ধমোহ তুলে রাখার ছলটাও হতে পারে আত্মঘাতি বেশ, স্থির অবসাদ! তবুও জটিল হাওয়াদের আঘাত কী করে যে ছুঁয়ে দেখে বোবামন, দেহের মিনার! এই যে অতীত কেনো যে মিশে আছে চার পায়ে... হয়তোবা ভালোলাগা গেল বর্ষা জলে। মনধূসরতা ছুঁয়েছে কি ঘাসপাতা, তারও আগে পেয়েছো তো নরম মাটির ঘ্রাণ...


আমাকে ফিরাতে পারো জন্মাবধি, ফিরাতে পারবে কি কবরে?
দেহ মিনার ছুঁয়ে দেখো সরলতায় আমি হারাইনি বেশি দূরে...

বুক খোলা দেহের ত্রাস

সারসত্যকথা নিজেদের বিশ্বাস, জানে কি ভরা-ছায়া-মরা-গাছ, একান্ত ব্যথাবিশ্বাস নিজের সাথে মানিয়ে নেয়া কি সহজ? হাড়ের সম্পর্ক বেমানান বলবো না, হতে পারে দ্বন্দ্ব ভেদাভেদ দৃষ্টিভ্রমসহ কঠিন কাজ। স্বতই আমি পাঠ নিচ্ছি বুক খোলা দেহের তাস! ... সকল সঙ্গ করিয়াছি ত্যাগ; ক্ষণমুহূর্তপ্রহর নিজ জিজ্ঞাসার ভেতর নৈঃশব্দ প্রিয়বোধ... ঘাসফুলে বেঁচে থাকে আশা, ইচ্ছেমৃত্যুসহ জানার হৃদয়...

ফিরতে ফিরতে আর ফিরলো না বাঁকানো সারসত্যকথা নিজেদের বিশ্বাস
কথা ও ঘটনা তুমিও কি জেনেছো? কেনো হয় বুক খোলা দেহের ত্রাস!

আড়াল থেকো না প্রিয় বেদনা

পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে দেহের খলবল ক্রমশ বাড়ছে... গতি-কৌতূহল নাচিয়ে তুলছে বাধা ও ভীতি, আমাকে তাতিয়ে রাখছে সব অনুভূতি... প্রতিশ্রুতি আমাকে ধাক্কা দিলেই সব নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে অনুভূতির আঘাতে! গাছের ছায়া আর খাড়া রোদের ভেতর জমিয়ে রাখি অশ্রুবিন্দু, ভয়ভীতি...

আমার ভেতর আমাকেই চাষ করি যাহা কেউ জানিলো না
আমার ভেতর তোকেও পুষি আড়াল থেকো না প্রিয়বেদনা

আমি তার চোখের ভেতর আমাকেই দেখি

চাইলেই সব কিছু হাতের নাগালে আসে কি? যেমন, নোনা জলের স্বাদ আফালি-বাতাসের ঘ্রাণ... বুকটান। ধ্যানে বসে রাশি গুনলেই দেখি কোমল বুকের ভেতর কে যেনো বসে আছে আনমনে; চোখের পরতে গুছিয়ে রাখছে শেষবারের মতো কারো দৃষ্টি অনুভব; তিনকোঁচা শাড়ির ভাজে লুকিয়ে রাখছে খরাস্বপ্ন পাথর-ফুল-ঘ্রাণ। কঙ্কনের শব্দ টনটন বাজলেই আমার বুকে গাঁথে তীর ও ধনুক। তবুও তার চোখের ভেতর আমাকেই দেখি...

আমি তার চোখের ভেতর আমাকেই দেখি! সে-কি তা জানে?
চোখের ভাজে লুকানো যত স্মৃতিকথা এখন আর পড়ে না মন

চোখের শর্ট-রেঞ্জে জল

শিকল পরালে কি সকল অধিকার জল গলে নদী হবে? কিংবা নদী গলে জল? মৃতআত্মার গ্রহণ হউক চুপচাপ ... তোমাকে পাবার কাঙ্ক্ষা কাটাতে গিয়ে ক্ষুধার্ত আমিসহ হাতের রাশি- একা বসে থাকলে সেও ভালোমানুষের রূপ ধরে! আর তুমি ওই মুখে রেখে যাও কল্পনা... শব্দের ডালে বাজে হাতের চুড়ি! কিছুই জানলে না তুমি রহস্যময় পাতা...

চোখের শর্ট-রেঞ্জে জল ফরওয়ার্ড হলে আমিও চোখে শিকল টেনে ধরি
শিকলপরা সব অধিকারই হারানো চাবিসিন্দুক ভেবে-ভেবে ফিরি বাড়ি

বিয়োগ হলেই তো ফলাফল

তীব্র ভেদাভেদ আর জানার আবেগ কতবেগে চলে; ভাবলেই আমার দৃষ্টি সেলাই করতে চায় অর্ধেকচিন্তায়! দৃষ্টিপাঠে ঢুকবার কথা ছিল আরো কতো আগে; সময় আমাকে সহায়তা করেনি, কিংবা সময় আমাকে সে স্বাধীনতা দেয়নি! আমাদের সময়ের উপর দিয়ে হেঁটে গেলেই তো ভালো; সহ্য করো না তুমি বিষাদ-চিরন্তন... পরস্পর বিয়োগ হলেই তো পাবো ফলাফল...

এমন ভেদাভেদ হয়তবা কখনও বিব্রত আর বিভ্রান্তি ছড়াবে
দৃষ্টি সেলাই হলেও ফিরবো ডেরায়... তুমি কি তখন পালাবে?

আঙুল ফল চাষ

বুকের ভেতর আটকে যাচ্ছে দম! তুমি চিন্তা থেকে সরে দাঁড়াও প্লীজ...। দেখি তো আমি আঙুলফল চাষে খুলে যায় কি-না দেহের কুণ্ডুলি। এমন পদক্ষেপ অনাধিকারে খাড়া হতে থাকে, বদমেজাজে। মন খারাপ করে থাকা, হয়ত একদিন এসেছিল অতি গোপনে, বৃষ্টির পাশাপাশি। আর তুমি কি-না বারবার বলো- অপেক্ষা করো। একদিন ঠিকই তোমার উপলব্ধি জানিয়ে দেবে আমার অনুপস্থিতি...


কিছুই শিখিনি আমি- হেঁটে হেঁটে উঠতে শিখেছি শুধু সিঁড়ির ধাপ...
ও-আঙুলফলচাষ; আমাকে কি শেখানো যায় না দেহ-কুণ্ডুলি-আক্ষেপ

দিনের স্মৃতি খুন হয়

আমাদের বিষণ্ণতা অপরাজয়। যার জন্য সারাদিনের স্মৃতি খুন হয় একই জায়গায়! আমি যদি দুর্বল হতে থাকি পায়ের তলায়। বাধা নেই, সময় আমাকে আলাদা ভাবতে শিখিয়েছে, আপন মনের ভেতর মন খুলে ফেলা যায়। শুধু জানতে হয় একটি আদর-চিহ্ন কতদিন বাঁচে, জীবদ্দশায়। আর কতদিন সৌরভ ছড়ায়? আমাদের জীবনগ্লানি যেদিন ছুটি পাবে- দেখবো প্রতিশ্রুতি কার নাম লয়...


শুধু জানতে ইচ্ছে হয় আদর-চিহ্ন কতদিন বাঁচে
চন্দ্রিমা রাতে আমারও জীবনগ্লানি মন খোলে নাচে

গোপন স্পৃহাগুলো প্রকাশ করিনি

আমাকে বিদ্রুপ না-করাই ভালো। অতঃপর বলো- কতটুকু বুঝলে হেলানো দেয়াল ভুলে? বিদ্রুপ ছুঁড়ে দাও, দেখো কে বেশি দুঃখে মিশে থাকে, কে বেশি খুঁজে হারানো পদচিহ্ন। আমি তো আছি, না-চাইলেও পাশাপাশি...। যতদিন রোদফল হাঁটাহাঁটি করবে দেয়ালে-দরজায়-জানালায়, তাকানোর ফাঁকে লুকানো রবে চাওয়া-পাওয়ার গ্লানি; আমার কিছু  ছিল কাঙ্ক্ষা গোপন রাখিনি...

এ জীবন খুবই প্ররোচনাময়; গোপন স্পৃহা প্রকাশ করিনি
করাত কলের পাশে একাই ধরে রাখি জল আঙুলের গ্লানি

ভালো থেকো হারানো কান্না

শেষঅব্দি আবেগ বাড়ালাম কপালে হাত রেখে; জীবন আর প্রকৃতির রূপরঙ বলতে আলাদা কিছু নেই কখনো ভাবিনি। জলহীন চোখের ভয় হাওয়ার পালকে উড়ে যাচ্ছি; নীরব তাকানোর ফাঁকে গলানো চাওয়া-পাওয়ার গ্লানি; আমার কিছু কাঙ্ক্ষা ছিল গোপন রাখিনি; ব্যাধিকষ্ট দু’চোখ ভরে, চুপচাপ আমি চোখের পলকে তুলে নেবো জলফল, হাসির টোল, দেহফুলসহ লুকানো বকুল, আরো... আরো কত কি! দেখবো সেদিন তুমি কি না বলতে পারো...

আবেগ বেড়ে গেলে, কেনো যে বেড়ে যায় হৃদকম্পন ধারণা
নিরবতা ভালো থেকো আমিসহ, ভালো থেকো হারানো কান্না

ঠিক দুপুরও তৃষ্ণা নেয় লুটে

ঠিক দুপুর বেলা ‘হা-হা হিহি’ করে নিরবতা পরে নিল ছায়া গাছপালা, আমি নিরবতার ভেতর খালি পায়ে হাঁটি; মাটির ঘ্রাণ মেখে ভরে যাচ্ছে প্রাণ, মাটির রস টেনে নিচ্ছে পায়ের পাতা; কত দিন হল মাটিতে ফেলি না পা! ততদিনে বেড়ে গেছে মাথার প্রেসার, ডাক্তার বলেছে এ-বয়স তুমুল আড্ডার; এ-বয়সে রক্তচাপ বাড়বে কোনো! ‘রাতে কি ভালো ঘুম হয় না’? সে কথা ভাবি- আর একা একা হাসি হাঁটার পাশাপাশি...

আমি হেঁটে গেলেই নিরবতা আমার পেছনে পেছনে ছুটে
আমি হেঁটে গেলেই ছায়ার ঠিক দুপুরও তৃষ্ণা খায় লুটে

ভাঙা- গড়ার ভেতর সম্পর্কস্থাপন

আমাকে তাড়িত করে নির্বাকজীবন আর শ্মশানের হাওয়া। বলি- অপেক্ষা তুমি, জোরেশোরে হাসো, চেয়ে দেখো অপেক্ষায় কীভাবে মৃত্যু হচ্ছে আমি সহ পড়শির অপয়া ছায়া। কেনো যে পাও ভয়, কেনো যে দাঁড়াও সরে... না-পাওয়ার দূরত্ব যতটুকুই হউক; শ্মশানের হাওয়া...। বলি, মন খুলে তেভাগা করো, দেখবে শেষরাত্রির ঘুমের ভেতর তার স্থায়ীত্ব বেড়ে যাবে হাজার গুণ...

ময়দান আর শ্মশানের হাওয়া তো একই; ব্যবধান কবরের হাওয়ায়
কবর সে-তো নিশ্চিত অন্ধকার; দু’ফোঁটা জল ছিটিয়ে দিও পরিচয়

একা দাঁড়িয়েছি আমি আর যৌবন

কাগজ কলম পাশাপাশি; আমিও বসে আছি। সিগ্রেটের মাথায় শব্দজট খোলার গন্ধ। নীলকালি শাদাকাগজের ভেতর দিলাম লম্বা এক টানÑ কী হয় এখন? সরলরেখা! সরলরেখার ভেতর একাই গাঁথছি বন্ধন; হেফাজতে রাখছি শরীর রেখায় অবশ-করা কামরঙাদিন। ঐভাবে আর কত ধরে রাখা বন্ধন ব্যক্তিক জীবন? লম্বা টানের ঠিক মাঝামাঝি আঁচড় ফোটালাম- দুইরেখা মিলে হলোটা কী? মন বলছে সন্ধি, আমি বলি মিলন...

দুই রেখায় মিল ভাল; একা দাঁড়িয়েছি আমি আর যৌবন
বয়সটা দড়িদড়ার শেষটান; জীবন সিগ্রেট-চায়ের মধ্যক্ষণ

জোড়া চোখের নিঃশ্বাস

আমার রাত্রিকথা বেঁচে থাকার কাঙ্ক্ষা চিরে উঠে দাঁড়ালো চিরায়ত রক্তকণিকার ভেতর, কাঙ্ক্ষা ঠেলে যেতে যেতে শেষ যাত্রার ফাটল খুলে সঞ্চয় করছি মৃতমুখের দেহাবশেষ... তুমি দীর্ঘায়িত রাশিভেদ। শূন্যে ঝুলে থাকা আরো আরো একটি আশা। আমি কি শিখেছি ধরার কৌশল, জানার অধিকার। একবার বলে যাও, ও-জোড়া চোখের নিঃশ্বাস, আমাকে প্রশ্রয় দিয়ে দিয়ে নিরাশার চোখে ঢালবে কি জল, পোড়াবে কি দেহাবশেষ...

রাত্রিকথা সঙ্গীতের চেয়েও মধুময়; অ-পরিচিত রেখায়
ও-জোড়া চোখের নিঃশ্বাস? প্রসারিত হও রাত্রিডানায়

Monday, January 25, 2010

প্রিয় আঙুলের দোলা

যে একটুকরো মাংসের সাথে মিশে আছে সাদা রঙ চর্বি, মাংস থেকে খুলে নিলেই তরতরে কাঁপে নিস্তেজ পেশী! পেশীর ফাঁকে ফাঁকে যে রক্ত মিশে থাকে, ওই রক্তের ভেতর হাজারবার খুঁজে ফিরি স্মৃতিকারখানা; দু’হাত ভরে আমি তাকে আদর করি। রক্তের সাথে বের করে ফেলি তিনটুকরো মাংসের দীর্ঘশ্বাসসহ পুরো নাড়িভুড়ি। আমার কাটা আঙুলের রক্তের সাথে মিলিয়ে দেখি তার রঙ একই রূপরঙে রক্তারক্তি- ছোঁয়াচে টিটকিরি...! বলি- তুমি আমার নাগাল পাবে না। প্রিয় আঙুলের দোলা...

দেহের আড়াল খুললেই আমিও হারাই; হারায় রাশি ও গ্লানি
তোর সঙ্গ দিতে ইচ্ছে-কাঙ্ক্ষা খাড়া দু’টি পা; কিন্তু পারিনি

সহজে ঢুকে যাবার কোলাহল

বেরুবার রাস্তা পেলে সহজেই ঢুকে যেতে পারি কোনো কথার ভেতর। আমাকে ক্ষণে ক্ষণে চিনে রাখে দূরের হাওয়া। কথারা অবিরাম উজানস্রোত বেয়ে যায়; আমাকে জড়িয়ে ধরে কারো হালকা-ভারি বেদনা। দুঃখও গুটিয়ে রাখা যায় আপন মহিমায়। যদি জাগ্রত হয় শক্ত হাওয়া এই হাওয়ার ভেতর আমি চোখ খুলতে পারি, স্মৃতি-স্বপ্ন খুলতে পারি না...

অতি সহজে যদি খোলা যেত দেহের ভাজ ও ঘ্রাণ
দুঃখ গুটাতো সহসা; আশাকথা হত না অপেক্ষমাণ

রাত্রিফুল, ব্যথাফুল কমপ্লেক্স

যাবার দিনে দুয়ারে বাঁধলি না কোলাহল। তোকে পাবো না বলে একা একা চারদেয়াল। আমিও দাঁড়াইনি কাল, বদলে যাচ্ছি পরস্পর! সে এক বিরাট কাহিনী অপেক্ষার কালোপাথর। ভাবতে পারিস দেহ-মন-চোখ-হাড়সহ রাতের অন্ধকার। অন্ধকার আমারও ভালো লাগে। ভালো লাগে রাত্রিচোখের গতিকে ভেঙে-চুরে দেখার। রাত্রিফুল, ব্যথাফুল ফুটলে সাজাই স্মৃতিকমপ্লেক্স...

রাত্রিফুল ব্যথাফুল ছুঁলে সামান্য দূরেও সইতে পারি না
অনিচ্ছা ভ্রমে সে-ও একা; দেহের ভেতর যত প্ররোচনা

যে পোড়া বিষে ধ্বংস অনিবার্য

দীর্ঘরাত্রি জেগে থাকি দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার আশায়। আশায় আশায় ফেরি করি আবেগী ইতিহাস। তোমার শ্বাসের ভেতর মিশে যেতে যেতে হৃদপোড়া বিষে কেবলই অবগাহন করে উঠি অষ্টপ্রহর। কেন যে হারানো মুদ্রার মতো সরে দাঁড়াও আর নতুন জামার ঘ্রাণ হয়ে লেগে থাকো অস্তিত্বময়। হারানো মুদ্রা, ঘ্রাণ এইসব গুনে গুনে অবশেষে আমিও পোড়াবো সকল অনিবার্য...

অপেক্ষায় নয় দীর্ঘরাত্রি জেগে থাকি দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার আশায়
যে পোড়াবিষে ধ্বংস আমার অনিবার্য তাকি তোমাকেও পোড়ায়?

সরে যেতে যেতে স্পর্শ বরাবর রক্তাক্ত হই

হতবাক ফুলের কাছে দুঃখ তোলে রেখে তোমার স্পর্শ বরাবর দাঁড়াতেই রক্তাক্ত হয়ে উঠে দশানন। চুপচাপ ভাগাভাগি করি দশ অঙুলে ফোটে থাকা হতাশ ফুলের সঙ্গতাড়না। আপন মনে জোড়া চোখে চিরকাল বেদনায় রঙমাখা, জোর করে দূরে ঠেলে রাখা কিংবা হঠাৎ ছুটে আসা মেঘকান্না বেশিদিন ধরে রাখা যায় কি সহজে! সময় ছিঁড়ে বাড়াই সহযোগিতার হাত। শোবার ঘরে করি পায়চারি। চোখ বিব্রত হলে ভয়ে বাড়াই পা...

হতবাক ফুলের কাছে দুঃখ তোলে রাখার কৌশল... নিজেরই দীর্ঘপ্রত্যাশা
আপন মনে চিরকাল বেদনার রঙমাখা- সহজকীর্তি, জলবোনা পিপাসা

জলের করাত

চুড়ির শব্দও বাজে না, নূপুরের শব্দও ফোটে না পায়ে। তোর পাশাপাশি বসে দূরের দুঃখ ভুলিবার জাগে সাধ। স্বপ্ন উপুড় করে রাখি। কী আছে কী নেই এমন কাঙ্ক্ষা দীর্ঘকাল জাগে... জাগে জলে ভাসার হালচাল। দেহের বহুরূপে খুঁজি পাঁজরের রক্তপাত; আমাকে কিছু শিখাও জলানুভব... ও জলের করাত...

চুড়ির শব্দও বাজে না, নূপুরের শব্দও ফোটে না পায়ে। চাই কালো দাগ ছুঁতে
তুমি জলের গ্রীবায় দাঁড়িয়েছো; আমার সকল আশা কেটে নাও জলের করাতে